
জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ, মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিকের বাড়িতে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ যেন নির্বিঘ্নে করা যায় সেই আয়োজন করছে পুলিশ। এমন অভিযোগ উঠেছে শেরপুর পুলিশের বিরুদ্ধে। তারা ইতোমধ্যে সাবেক হুইপের বাড়ির ভাড়াটিয়াদের সেখান থেকে সরে যেতে নোটিশ দিয়েছে।
শেরপুর জেলা শহরের মাধবপুর এলাকায় সাবেক হুইপ আতিউর রহমান আতিকের ৬ তলা ভবনটি অবস্থিত। এ ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় আতিক ও তার স্ত্রী বসবাস করেন। ভবনটির অন্য তলাগুলোতে ভাড়াটিয়া রয়েছে। ৫ম তলায় ময়মনসিংহ কর অঞ্চলের ১০ ও ১৫ নম্বর সার্কেলের উপ কর কমিশনারের কার্যালয়, ৪র্থ তলায় অগ্রণী ব্যাংক পিএলসির আঞ্চলিক কার্যালয়, প্রথম থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত শেরপুর সোনালী ব্যাংক পিএলসির কার্যালয় অবস্থিত।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সাবেক হুইপের বাসভবনটিতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় অবস্থিত হওয়ায় এখনো সেখানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করতে দেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। এখন আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো পুলিশের সঙ্গে যোগসাজস করে বাড়িটিতে হামলা, লুটপাটের আয়োজন করছে। যেন নির্বিঘ্নে এ কাজটি করা যায় সেজন্য ক্ষেত্র তৈরি করছে পুলিশ।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি সাবেক হুইপ আতিকের ভবনের ভাড়াটিয়াদের ওই ভবন থেকে কার্যালয় স্থানান্তর করতে চিঠি দেন শেরপুর ডিএসবির পুলিশ সুপার (এসপি)। তিনি একই দিনে সোনালী ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক এবং উপ কর কমিশনারকে চিঠি দেন। তিনটি চিঠির ভাষা প্রায় একই। সোনালী ব্যাংককে দেওয়া চিঠির বিষয় হিসেবে পুলিশ সুপার লেখেন- পতিত হাসিনা সরকারের তিন বারের সাবেক হুইপ ও পাঁচবারের এমপি আতিউর রহমান আতিকের মালিকানাধীন ভবন হতে রাষ্ট্রায়াত্ত সোনালী ব্যাংক পিএলসি, শেরপুর শাখা জরুরি ভিত্তিতে স্থানান্তর প্রসঙ্গে।
ব্যাংকের কার্যালয় সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠিতে এসপি লেখেন, ‘শেরপুরের সকল তফসিলি ব্যাংকের উদ্বৃত্ত অর্থ উক্ত শাখার বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা থাকে। ভবনটির মালিক পতিত হাসিনার সরকারের তিনবারের সাবেক হুইপ ও পাঁচবারের এমপি আতিউর রহমান আতিক। দেশের বর্তমান পরিস্থিতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এবং তার দোসরদের প্রতি ছাত্র জনতা তথা দেশের আপামর জনসাধারণ মারাত্মকভাবে ক্ষুব্ধ। উক্ত ভবনে সরকারি মালিকানাধীন রাষ্ট্রায়াত্ত সোনালী ব্যাংক পিএলসি, শেরপুর কার্যক্রম পরিচালনা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। যেকােনো সময় যেকোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনার ঘটার সমূহ সম্ভাবনা বিদ্যমান।’
উপ কর কমিশনারকে পাঠানো চিঠিতে এসপি লেখেন- ‘যেকোনো সময় হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের মতো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটার সমূহ সম্ভাবনা বিদ্যমান।’
জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ আতিউর রহমান আতিক বেঙ্গল নিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট আমার ভবনটিতে বাইরে থেকে হামলা চালিয়ে যাবতীয় কাচ ভেঙ্গে দেওয়া হয়। ভবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় থাকায় কয়েক লাখ টাকা খরচ করে নতুন কাজ লাগিয়ে দিয়েছি। এখন আবার হামলার আশঙ্কা করছে পুলিশ। ভবনের ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে আমার আরো কয়েক বছরের চুক্তি রয়েছে। কিন্তু এখন তাদেরকে সরে যাওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বেঙ্গল নিউজ টোয়েন্টিফোরকে জানান, পুলিশের কাজ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। কিন্তু শেরপুরের পুলিশ সাবেক হুইপের ভবনে আগুন ও লুটপাটের বন্দোবস্ত করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। হামলাকারীরা যেন নির্বিঘ্নে এসব করতে পারে সেই আয়োজনই করছে পুলিশ।
শেরপুর পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম বেঙ্গল নিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, চিঠিটা আমি দিয়েছি। কারণ উনার ভবনে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, দলিল দস্তাবেজ রয়েছে। এগুলোর জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হলে সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন নাকি ভাড়াটিয়াদের সরে যেতে বলবেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে আমিনুল ইসলাম বলেন, ভবনের ভাড়াটিয়ারা কিন্তু সাধারণ নাগরিক নয়। তারা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান। আমরা ইতোমধ্যেই ভবনের নিরাপত্তায় অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োজিত করেছি।
