মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তির কন্যাই যদি একমাত্র সন্তান হন, তাহলে সেই কন্যা মোট সম্পত্তির অর্ধেক পাবে। যদি একাধিক কন্যা থাকে এবং পুত্র সন্তান না থাকে, তবে কন্যারা মোট সম্পত্তির দুই–তৃতীয়াংশ পাবে এবং এ অংশ সব কন্যার মধ্যে সমান ভাগে ভাগ হবে। বাকি সম্পত্তি অন্যরা পাবেন।
বাবার মৃত্যুর সময় যদি তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ মেয়ের মা বেঁচে থাকেন, তাহলে তাঁর স্ত্রী সম্পত্তির এক–অষ্টমাংশ পাবেন এবং একমাত্র কন্যা সম্পত্তির অর্ধেক পাবে এবং বাকি সম্পত্তি অন্যরা পাবে। যদি স্ত্রী বেঁচে থাকেন এবং একাধিক কন্যা থাকে এবং কোনো পুত্র সন্তান না থাকে, তাহলে কন্যারা সম্পত্তির দুই–তৃতীয়াংশ পাবে।
আর যদি মৃত ব্যক্তির স্ত্রী অর্থাৎ মেয়ের মা বেঁচে না থাকেন, তাহলে তাদের পুরো সম্পত্তির অর্ধেক তাঁর একমাত্র মেয়ে পাবে। একাধিক মেয়ে থাকলে পুরো সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ পাবে। এর পর বাকি সম্পত্তি অন্য ওয়ারিশরা পাবে।
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, মৃত ব্যক্তির বাবা কিংবা মা জীবিত থাকলে কন্যা সন্তানের পাশাপাশি বাবা, মা এক–তৃতীয়াংশ পাবে। মৃত ব্যক্তির অন্য কোনো ধরনের ওয়ারিশ না থাকলে তখনই কেবল কন্যা বা কন্যারা পুরো সম্পত্তি পাবে। মৃত ব্যক্তির এক বা একাধিক কন্যা সন্তান থাকলে এবং তাঁর ভাই-বোন জীবিত না থাকলে, ভাই বা বোনের ছেলেরা ক্রমান্বয়ে সম্পত্তির ভাগ পাবে। আপন ভাই বা বোন না থাকলে সৎ ভাই, সৎ বোন (যারা অন্য মায়ের সন্তান) কিংবা তারা না থাকলে সৎ ভাইয়ের পুত্র থাকলেও অবশিষ্ট ভোগী হিসেবে তারাও সম্পত্তির ভাগ পাবে।
পুত্র সন্তান না থাকলে কেউ তাঁর এক বা একাধিক কন্যাকে জীবিত অবস্থায় সম্পত্তি হেবা বা দান করে যেতে পারেন। তবে এ দান করতে হবে যথাযথ উপায়ে এবং দানের সব আইন মেনে। যেমন– প্রথমত, দানটি অবশ্যই ঘোষিত হতে হবে। দ্বিতীয়ত, দানকৃত সম্পত্তি কন্যার দখলে দিয়ে দিতে হবে বা হস্তান্তর করে দিতে হবে এবং দানের লিখিত দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে।
ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন। ফাইল ছবি
অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যাকেও দান করা যাবে। তবে সম্পত্তির দখল কন্যা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরই দিয়ে দিতে হবে। কন্যাকে উইল করে সম্পত্তি দেওয়া যাবে। মনে রাখতে হবে, কন্যা সন্তানকে পুরো সম্পত্তির এক–তৃতীয়াংশের বেশি উইল করা যাবে না। এর বেশি উইল করলে অন্য উত্তরাধিকারীদের সম্মতি লাগবে
আর উইল কার্যকর হবে উইলকারীর মৃত্যুর পর। অনেকে মেয়ে বা মেয়েদের হেবা করে দিয়ে মেয়ের কাছে থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলের মাধ্যম সম্পত্তি বিক্রি এবং তত্ত্বাবধান করার ক্ষমতা দিয়ে থাকে। এ ধরনের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি হতে হবে রেজিস্ট্রিকৃত এবং সাবালক মেয়ের সম্মতিতে।
লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট